সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সকলেই কেন ভগবানকে মানে না?

ভগবদগীতাতে বলা হয়ছে যে, পরশেশ।বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীচরণকমলে শুধু আত্মসমর্পণ করলেই অনায়াসে দুরতিক্রম্য মায়াকে অতিক্রম করা যায়। এখন প্রশ্ন হতে পারে যে, তথাকথিত পন্ডিত ,দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, ব্যবসায়ী, পরিচালক,রাজনীতিবিদ ও জনসাধরনের নেতেরা কেন সর্ব শক্তিমান পরমেশ্বর ভগবানের শ্রীচরনণ শরণাগত হন না? মানব-সমাজের নেতারা জড়া প্রকৃতির বিধান থেকে মুক্তি লাভ করার জন্য বহু বছর ধরে অধ্যবসায় সহকারে অনেক বড় বড় পরিকল্পনা করে। কিন্তু সেই মুক্তি লাভ করাটা যদি কেবল মাত্র ভগবানের শ্রীচরণে আত্মসমর্পণ করা মতো সহজ ব্যাপার হয় , তাহলে এ সমস্ত বুদ্ধিমান ও কঠোর পরিশ্রমী নেতারা সেই সহজ সরল পন্থাকে অবলম্বন করে না কেন?




ভগবদগীতাতে অত্যন্ত সরল ভাবে সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে-
ন মাং দৃষ্কৃতিনো মূঢ়াঃ প্রপদ্যন্তে নরাধমাঃ।
মায়য়াপহৃতজ্ঞানা আসুরং ভাবমাশ্রিতাঃ।।
 -ভগবদগীতা -.৭ .১৫

অর্থাৎ “মূঢ়, নরাধম , মায়ার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে এবং যারা আসুরিক ভাবসম্পন্ন, সেই সমস্ত দুস্কৃতকারীরা কখনো আম্র শরনা গত হন না।”
যে সমস্ত তত্ত্বজ্ঞ পুরুষ সমাজের যথার্থ নেতা , যেমন - ব্রহ্ম, শিব, কুমার, মনু, ব্যাসদেব, কপিল, দেবল, অসিত, জনক, প্রহ্লাদ, বলি এবং পরবর্তীকালে মধ্বাচার্য, রামানুজাচার্য, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এবং আরো অনেকে -যাঁরা হচ্ছেন বিশ্বস্ত দার্শনিক , রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, বৈজ্ঞানিক , তারা সকলেই পরম শক্তিমান পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে আত্মসমর্পণ করেছেন। যারা প্রকৃতপক্ষে দার্শণিক নয়, বৈজ্ঞানক নয়, শিক্ষক নয়, শাসক নয়, কিন্তু স্বার্থসিদ্ধির জন্য সেই প্রকার ভান করে লোক ঠকায়, তারা কখনো ভগবানের নির্ধারিত প্রন্থা অবলম্বণ করে না। ভগবান সমন্ধে কোনো ধারনা নেই; তারা কেবল মনগড়া জড়জাগতিক পরিকল্পনা রচনা করে এবং তার ফলে সমাজের সমস্য লাঘব হওয়ার পরিবর্তে  তাদের ব্যর্থ প্রচেষ্টার দ্বারা তা আরো জটিল হয়ে ওঠে। কারন , জড়া প্রকৃতি এতই শক্তিশালী যে, আসুরিক ভাবাপন্ন নাস্তিক নেতাদের সবরকম শাস্ত্রবিরোধী পরিকল্পনা কমিশনগুলোর জ্ঞানের দম্ভ নস্যাৎ করে দেয়।
নাস্তিক পরিকল্পনাকারীদের এখানে দৃষ্কৃতিনঃ অথবা ‘দুষ্কৃতকারী’ বলে অভিহিত করা হয়ছে। কৃতী মানে সুকৃতকারী। ভগবৎ-বিদ্বেষী পরিকল্পনাকারীরা অনেক সময় খুব বুদ্ধিমত্তাসম্পন্নও হয়, কেননা যেকোনো- বড় পরিকল্পনা, তা ভালোই হোক অথবা খারাপই হোক , সফল করতে হলে বুদ্ধির প্রয়োজন হয়। কিন্তু পেরমেশ্বরের পরিকল্পনার বিরুদ্ধাচরণ করে বলে নিরীশ্বরবাদী পরিকল্পনাকারীদের দুষ্কতকারী বলা হয় অর্থ্যৎ তাদের বুদ্ধি ও প্রচেষ্টা ভুল পথে চালিত হচ্ছে।
ভগবদগীতাতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, জড়া শক্তি সম্পূর্ণভাবে ভগবানের নির্দেশ পরিচালিত হয়। এর কোনো স্বাধীন-স্বতন্ত্র ক্ষমতা নেই। কোনোকিছুর প্রতিবিম্ব যেমন প্রকৃত বস্তুর ওপর নির্ভরশীল, জড়া প্রকৃতিও ঠিক তেমনই ভগবানের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু তবুও জড়া শক্তি অত্যন্ত শক্তিশালী। ভগবৎ-বিমুখ নাস্তিকদের ভগবৎ তত্ত্বজ্ঞান নেই, তাই তারা কখনোই বুঝতে পারে না জড়া প্রকৃতি কীভাবে পরিচালিত হয় এবং ভগবানের পরিকল্পনা কী। মায়ার প্রভাবে সম্মোহ এবং রজোগুন ও তমোগুনের দ্বারা আচ্ছাদিত থাকার ফলে তাদের সবকটি পরিকল্পনাই ব্যর্থ  হয়। হিরণ্যকশিপু , রাবন, আদি অসুরেরা বিদ্যা- বুদ্ধিতে কারো চেয়ে কম ছিল না। তারা সকলেই ছিল মস্ত বড় বৈজ্ঞানিক , দার্শনিক, শিক্ষক ও পরিচালক । কিন্তু ভগবানের ইচ্ছায় তাদের সেই সমস্ত বিরাট বিরাট পরিকল্পনাগুলো ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়। এ দুরাচারীদের চারটি ভাগে ভাগ করা যায়--মঢ়, নরাধম , মায়াপহৃত-জ্ঞান ও আসুরিক ভাবাপন্ন।

(১) মূঢ়     ঃ       মূঢ় হচ্ছে তারা , যারা কঠোর  পরিশ্রমী ভারবহী পশুর মতো মূর্খ । তারা সবসময় তাদের নিজেদের পরিশ্রমের ফল নিজেরাই ভোগ করতে চায়। তাই, তারা শ্রীভগবানকে তাদের কর্ম  উৎসর্গ করতে পারে না। গাধা হচ্ছে ভারবহী পশুর শেষ্ঠ উদাহরণ। এই পশুটি তার মনিবের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে পারে। এই বেচারি গাধা জানে না সে কার জন্য দিন-রাত খেটে চলছে। একটুখানি ঘাস খেয়ে উদরপূর্তি  করে, মনিবের হাতে মার খাওয়ার আতঙ্কে একটুখানি ঘুমিয়ে উঠে এবং গর্দভীর লাথি খেতে খেতে তার যৌন ক্ষুধার তৃপ্তি করে সে মনে করে যে, সে খুব সুখেই আছে । এই গাধাগুলো মাঝে মাঝে কবিতা আবৃত্তি করে জীবন-দর্শন আওড়ায়, কিন্তু তার রাসভ -নাদের ফলে সে অন্যদের কেবল জ্বালাতনই করে। মূঢ় সকাম কর্মীদের অবস্থাও ঠিক এই গাধার মতো। তারা জানে না কার জন্য কর্ম করা উচিত । তারা জানে না যে , কর্ম করার প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে যজ্ঞ, অর্থাৎ ভগবানকে সন্তুষ্ট করাই হচ্ছে কর্ম করার যথার্থ উদ্দেশ্য।
এ সমস্ত কর্মী , যারা তাদের স্বকল্পিত কর্তব্যের ভার লাঘব করবার জন্য দিনরাত গাদার মতো খেটে চলছে , তারা প্রায়ই বলে যে, জীবের অমরত্বের কতঅ শোনবার মতো সময় তাদের নেই । এ সমস্ত মূঢ় লোকের কাছে ক্ষয়িষ্ণু জাগতিক লাভটাই হচ্ছে সবকিছূ। অথচ ওরা জানে না দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে তারা যে কর্ম  করছে , তার একটা নগণ্য অংশই কেবল তারা উপভোগ করতে পারে । অনর্থক বিষয়ে লাভের জন্য দিনরাত না ঘুমিয়ে গাধার মতো পরিশ্রম করে, মন্দাগ্নি আদি উদরপীড়ায় পীড়ীত হয়ে একরকম অনাহারে থেকে তারা তাদের কল্পিত প্রভুর সেবায় রত থাকে । তাদের যথার্থ প্রভুকে না জেনে ধনদেবতার পরিচর্যা করে তাদের অমূল্য সময় নষ্ট করে। দুর্ভাগ্যবশত , তারা কখনোই সমস্ত প্রভুর পরম প্রভুর শরনাগত হয় না অথবা তারা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তাঁর কথা শ্রবন করে না । বিষ্ঠাহারী শূকর কখনোই দুধ , ঘি চিনির তৈরী মিঠাই খেতে চায় না। তেমনই , মূঢ় কর্মীরা অস্থির পার্থিব জগতের ইন্দ্রিয়-তৃপ্তিদায়ক কথঅই কেবল শ্রবন করে , কিন্তু  যে শ্বাশত প্রাণশক্তি জড় জগৎকে চালনা করেছে , সেই অপ্রাকৃত শক্তির কথা শোনবার বিন্দুমাত্র সময় পায় না।

(২) নরাধম     ঃ     অন্য শ্রেণীর দুরাচারীদের বলা হয় নরাধম অর্থাৎ তারা হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্তরের মানুষ । ৮৪,০০,০০০ যোনির মধ্যে ৪,০০,০০০ হচ্ছে মনুষ্য -যোনি । এর মধ্যে অসংখ্য নিন্ম শ্রেণীর মানুষ আছে , যারা সাধারনত অসভ্য । সভ্য মানুষ হচ্ছেন তাঁরা , যারা শাস্ত্রের নির্দেশ অনুসারে সামাজিক , রাজনৈতিক ও ধমীয় জীবন যাপন করে। আর সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উন্নত হলেও যাদের জীবন ধর্মীয় অনুশাসনের দ্বারা পরিচালিত হয় না, তাদের নরাধম বলে গণ্য করা হয়। ভগবানকে বাদ দিয়ে কখনো ধর্ম হয় না কারণ, ধর্মের পথ অনুসরন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে পরম-তত্ত্বকে জানা এবং তাঁর সঙ্গে মানুষের নিত্য সম্পর্কের কথঅ অবগত হওয়া । গীতাতে পরমেশ্বর ভগবান স্পষ্টভাবে ঘোষনা করেছেন যে, তাঁর চেয়ে অধিক ক্ষমতাশালী কেউ নেই এবং তিনি হচ্ছেন পরম সত্য। তার ঊর্ধ্বে। আর কোন ক্ষমতা নেই। সভ্য মানবজীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরম সত্য বা সর্বশক্তিমান, পরমপুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে মানুষের নিত্য সম্পর্কের লুপ্ত চেতনার পুনজাগরন করা। মনুষ্য শরীর পাওয়া সত্ত্বেও যে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে না, তাকে বলা হয় নরাধম। শাস্ত্রের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, শিশু যখন মাতৃগর্ভে থাকে ( যে অবস্থাটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর), তখন সে ভগবানের কাছে প্রতিজ্ঞা করে যে, সেই অবস্থা থেকে মুক্ত হলেই সে ভগবানের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করবে। বিপদে পড়লে ভগবানকে প্রার্থনা জানানো জীবের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, কারন ভগবানের সঙ্গে তার নিত্য সম্বন্ধ রয়েছে। কিন্তু প্রসব হওয়ার পরেই শিশু তার জন্ম -যন্ত্রনার কথা ভুলে যায় এবং মায়ার প্রভাবে তার মুক্তিদাতাকেও ভুলে যায়।
শিশুর অভিভাবকদের কর্তব্য হচ্ছে, তাঁদের সন্তানদের সুপ্ত ভগবৎ- প্রেমকে পুনজাগরিত করা ধর্মশাস্ত্র মনু-স্মৃতিতে নির্দেশিত দশকর্ম সংস্কারের উদ্দেশ্য হচ্ছে , বর্ণাশ্রম পদ্ধতির মাধ্যমে এই ভগবৎ-প্রেমকে পুনর্জাগরিত করা। কিন্তু আধুনিক যুগে পৃথিবীর কোথাও এ পদ্ধতি কঠোরভাবে অনুসরন করা হয় না। তাই, আধুনিক যুগে শতকরা নিরানব্বই জন মানুষই নরাধেমে পরিনত হয়েছে।
যখন সমগ্র জনগনই নরাধমে পরিনত হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই সর্বশক্তিময়ী মায়ার প্রভাবে তাদের তথাকথিত শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে অথহীন হয়ে পড়ে । গীতার মানদন্ড অনুসারে , তিনিই হচ্ছেন প্রকৃত পন্ডিত, যিনি বিদ্ধান ব্রাহ্মণ, কুকুর, গরু ,হাতি ও চন্ডালকে সমদৃষ্টিতে দেখেন । এই হচ্ছে শুদ্ধ ভগবদ্ভক্তের দৃষ্টিভঙ্গি। পরমেশ্বর ভগবানের অবতার শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু যথার্থ নরাধম জগাই ও মাধাই ভ্রাতৃদ্বয়কে উদ্ধার করেন এবং এভাবেই তিনি দেখিয়ে গেছেন যে, প্রকৃত ভগবদ্ভক্তের করুনা কীভাবে সবচেয়ে অধঃপতিত মানুষের  ওপরেও বর্ধিত হয়। তাই, যে নরাধমকে ভগবান পর্যন্ত পরিত্যাগ  করেছেন ,ভগবদ্ভক্তের কৃপার প্রভাবে তার হৃদয়ে আবার পারমার্থিক কৃষ্ণভাবনার উন্মেষ হতে পারে ।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ভগবত -ধর্ম অথবা ভগবদ্ভক্তদের কার্যপদ্ধতি প্রচার করে উপদেশ দিয়ে গেছেন যে, শ্রদ্ধাবনত চিত্তে ভগবানের দেওয়া উপদেশ শ্রবন করার ফলে নরাধমও উদ্ধার পেতে পারে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ভগবানের চরণে আত্মসমর্পণ করা তো দূরে থাকুক , এই নরাধমগুলো ভগবানের বাণী পর্যন্ত কানে শুনতে চায় না। এভাবেই নরাধমেরা সবসময় মানব- জীবনের পরম কর্তব্যকে একেবারেই অবহেলা করে।

(৩) মায়াপহৃতজ্ঞান   ঃ     পরবর্তী শ্রেণীর দুস্কৃতকারীদের বলা হয় মায়য়াপহৃতজ্ঞানাঃ অর্থাৎ মায়ার প্রভাবে যাদের পান্ডিত্যপূর্ন জ্ঞান অপহৃত হয়েছে। সাধারনত  এরা অধিকাংশই খুব বিদ্ধান হয়- যেমন বড় বড় দার্শনিক, কবি, বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক আদি। কিন্তু মায়াশক্তি তাদের বিপদগামী করেছে , তাই তারা পরমেশ্বর ভগবানকে অবজ্ঞা করে থাকে।
আজকের জগতে অসংখ্য মায়য়াপহৃতজ্ঞানাঃ মানুষ দেখা যায়, এমনকি অনেক ভগবদগীতার পন্ডিত এ ধরনের মূঢ় । গীতাতে সহজ সরল ভাষায় বলা হয়েছে যে, শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন স্বয়ং পরম পুরুষোত্তম ভগবান । তাঁর সমকক্ষ অথবা তাঁর থেকে মহৎ আর কেউ নেই। তাঁকে কেবল সমস্ত মানুষের আদি পিতা বলা হয় না, তিনি সমস্ত যোনিভুক্ত জীবেরও পিতা। তিনি নির্বিশেষ ব্রহ্মের আশ্রয় এবং সমস্ত জীবের অন্তযার্মী পরমাত্মা হচ্ছেন তাঁরই আংশ। তিনি সবকিছুর উৎস, তািই তাঁর চরণারবিন্দের শরনাগত হওয়ার জন্য প্রত্যেককেই পরামর্শ দেওয়া হয়ছে ।সুদূড়ভাবে এসব সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও মায়য়াপহৃতজ্ঞানাঃমানুষেরা ভগবানকে অবজ্ঞা করে এবং তাঁকে একজন সাধারন মানুষ বলে মনে করে । তারা জানে না যে, এ দুলর্ভ মনুষ্য-শরীর ভগবানেরই নিত্য চিন্ময় শ্রীবিগ্রহের অনুকরনে রচিত হয়েছে।
মায়য়াপহৃতজ্ঞানাঃ মূর্খেরা গীতার যে প্রামাণ্যবর্জিত ব্যাখা করে, তার ফলে তারা প্রকৃতপক্ষে গীতার যথাযথ অর্থের কর্দথ করে । গুরু-পরম্পরাক্রমে গীতার জ্ঞান প্রাপ্ত না হওয়ার ফলে তারা গীতার প্রকৃত অর্থ উপলদ্ধি করতে পারে না। তারা যে মনগড়া ব্যাখ্যা করে তা সর্ম্পূর্ণরূপে ভ্রান্ত েএবং তাদের সেই মতবাদগুলো পারমার্থিক সাধনার পথে দুরতিক্রম্য প্রতিবন্ধকের মতো হয়ে দাঁড়ায় । এই মোহগ্রস্ত ব্যাখ্যাকাররা কখনোই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণারবিন্দের শরনাগত হয় না এবং অন্য কাউকেও ভগবানের শরনাগত হওয়ার শিক্ষাদান করে না।

(৪) আসুরিক ভাবাপন্ন ব্যক্তি    ঃ   সর্বশেষ শ্রেণির দুস্কৃতকারীদের বলা হয় আসুরং ভাবমাশ্রিতাঃ অথবা আসুরিক ভাবাপন্ন ব্যক্তি। এ ধরনের মানুষেরা নির্লজ্জভাবে নাস্তিক । এই শ্রেণির নররূপধারী অসুরেরা তর্ক করে যে, পরমেশ্বর ভগবান কখনোই এই জড়জগতে অবতরন করতে পারেন না। কিন্তু ভগবান যে এই জড় জগতে অবতরন করতে পারে না, সেই সম্বন্ধে তারা কোনো যুক্তিও প্রদর্শন করতে পারে না । এদের কেউ কেউ আবার বলে যে, ভগবান নির্বিশেষ ব্রহ্মের অধীণ ,যদিও গীতাতে ঠিক এর বিপরীত কথাই বলা হয়ছে । পরম পুরুষোত্তম ভগবানের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে নাস্তিকেরা স্বকপোলকল্পিত অপ্রামানিক একাধিক অবতারদের অবতারনা করে । এ ধরনের মানুষদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে ভগবানের নিন্দা করা, তাই তারা কখনোই শ্রীকৃষ্ণের চরণারবিন্দের শরণাগত হতে পারে না।
দক্ষিণ ভারতের শ্রীযামুনাচার্য আলবন্দার বলেছেন , “হে ভগবান , তুমি যদিও তোমার অপ্রাকৃত রূপ, গুন ও লীলার দ্বারা অলঙ্কত , সমস্ত শাস্ত্র যদিও তোমার বিশুদ্ধ সত্ত্বময় শ্রীবিগ্রহকে অঙ্গীকার করে এবং দৈবীগুন-সম্পন্ন জ্ঞাণী আচার্যগণ তোমার জয়জয়কার করেন, কিন্তু তবুও আসরিক ভাবাপন্ন নিরীশ্বরবাদীরা কখনোই তোমাকে জানতে পারে না।”
তাই ,উপরোক্ত (১) মূঢ়, (২) নরাধম, (৩) মায়াপহৃত-জ্ঞান (৪) আসুরিক ভাবাপন্ন নাস্তিকেরা শাস্ত্র ও মহাজনদের উপদেশ সত্ত্বেও কখনোই পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণারবিন্দের শরণাগত হয় না । হরে কৃষ্ণ 

মন্তব্যসমূহ